নানা আয়োজনে দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ

নানা আয়োজনে দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ
আজ পহেলা বৈশাখ, চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে আজ ১৪২৫ সনকে

বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে কাল যুক্ত হবে নতুন বছর ১৪২৬। জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করবে বাঙালি জাতি। আজ পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মেতে উঠেছে দেশ। রাজধানীসহ দেশ জুড়ে থাকছে বর্ষবরণের নানা আয়োজন।
মূলত কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।
১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।
পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।
দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
প্রতিবারের ধারাবাহিকতায় এবারও বর্ষবরণে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন সংগঠনের নানা আয়োজন থাকবে। প্রতিবছরের মত বছরের প্রথম প্রভাতেই রমনার বটমূলের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ‘ছায়ানট’ ভোরের সূর্য দেখার সঙ্গে সঙ্গেই সরোদবাদন দিয়ে শুরু করেছে বর্ষবরণের মূল অনুষ্ঠান।
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ ১৪২৬ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা।
বাংলা একাডেমি সকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে বইমেলাসহ বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে একাডেমি চত্বরে।
এছাড়াও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদফর, জাতীয় জাদুঘর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, কপিরাইট অফিস, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও বিসিক নববর্ষ মেলা, আলোচনাসভা, প্রদর্শনী, কুইজ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এদিকে নির্বিঘ্নে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে অনুষ্ঠানস্থলে কেউ মুখোশ পরতে এবং ভুভুজেলা বাজাতে পারবেন না। মঙ্গল শোভাযাত্রা পুলিশ ঘিরে রাখবে এবং ভবনের ছাদ থেকে নজরদারি চালানো হবে।

No comments

Theme images by richcano. Powered by Blogger.