যেসব চ্যানেলে মনিটাইজেশন নাই সেসব চ্যানেল ইউটিউব বন্ধ করে দিবে’।

শান্ত হোন, শুনুন। একটা কথা বাজারে রটে গেলো যে ‘যেসব চ্যানেলে মনিটাইজেশন নাই সেসব চ্যানেল ইউটিউব বন্ধ করে দিবে’। এই কথাটি শোনার পর থেকেই আমি বেশ কিছু জায়গায় সার্চ শুরু করি। ম্যাশেবল থেকে শুরু করে অনেকগুলো ব্লগ এবং একটি ভারতীয় চ্যানেলে আরো ডিটেইলস গল্প শুনলাম। কিন্তু কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য না পেয়ে বিভিন্ন টেক ব্লগগুলোতে যথেষ্ঠ ধৈর্য্য ধরে এ বিষয়ে খুঁজতে থাকি। কি পাওয়া গেলো শেষে?

না কথাটা ঠিক নয়, বরং ইউটিউব বলেছে যেসব চ্যানেলের বির্তকিত ভিডিও কারণে বিজ্ঞাপণদাতারা তাদের প্লাটফরমকে দোষী করতে পারে বা তারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে সেসব চ্যানেল বন্ধ করা হতে পারে। অন্যকথায় বলতে গেলে যেসব চ্যানেলের কারণে ইউটিউবের ব্যবসায় সমস্যা হতে পারে তারা সেই চ্যানেলগুলোকে রিমুভ করতে পারে। যা আগেও হয়ে এসেছে।

আমি মুলত: ইউটিউবের মুখপাত্র কোন বক্তব্য দিয়েছে এমন সংবাদ পেতে চাচ্ছিলাম। সে নির্ভরযোগ্য তথ্যের জন্য অনেক ঘোরাঘোরির পর সবচেয়ে খ্যাতনামা টেক ম্যাগাজিন পিসিম্যাগ এর আজ প্রকাশিত একটি আর্টিকেল পাই, যেখানে ইউটিউবের ভেরিফাইড টিম একাউন্ট থেকে টুটই করে জানানো হয়েছে যে To clarify, there are no new rights in our ToS to terminate an account bc it’s not making money. As before, we may discontinue certain YouTube features or parts of the service, for ex., if they're outdated or have low usage. This does not impact creators/viewers in any new ways. (টুইট লিংক নিচে দেয়া আছে)



এই গুজবের প্রেক্ষিতে জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেছে যে ইউটিউব নতুন করে এমন কোন আইন আনেনি যে টাকা উপার্জন না করলে সেই চ্যানেল বন্ধ করা হবে। বরং তারা বন্ধ করার জন্য আগে যেই পদ্ধতি অনুসরণ করতো এখনো তাই করবে যদি তারা পুরোনো ভাবেই তাদের চ্যানেল চালায় বা কম ব্যবহার হয়ে থাকে। এটা সাধারণ ক্রিয়েটর বা ভিউয়ারদের জন্য নতুন কোন ভাবে কোন কিছু তৈরী করবেনা। (এখানে আমি low usage বা কম ব্যবহারের কোন ব্যাখ্যা দিতে পারছিনা)

এছাড়া ইউটিউব কর্তৃপক্ষ থেকে Ivy Choi নামে জনৈক মুখপাত্র পিসিম্যাগ ম্যাগাজিনকে একটি ইমেইলের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য অবহিত করেছে বলেছে তাদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে। তারা আরো জানিয়েছে যে, একটি ঘটে যাওয়া ঘটনার উদাহরণ দিয়ে ইউটিউব তাদের কিছু তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ঘটনাটি এরকম: এবছরের প্রথম দিকে কিছু বড় বড় ব্রান্ড ইউটিউব থেকে তাদের বিজ্ঞাপণ তুলে নেয়। কারণ তারা দেখেছিলো যে কিছু শিশুদের সাথে সেক্স করতে আগ্রহী মানসিক বিকলাঙ্গ ব্যক্তি বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে গিয়ে যোগাযোগের নাম্বার এবং লিংক আদান-প্রদান করেছিলো। পরবর্তীতে বিষয়টি ইউটিউবের নজরে আসলে কমেন্টকারী সেই চ্যানেল/একাউন্টের কমেন্ট করার ক্ষমতা ব্লক করে দেয়া হয়েছিলো। অর্থাৎ তাদের ইউটিউব ব্যবহারের কিছু ক্ষমতা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ধরণের অসংখ্য কমেন্ট আমি বাঙ্গালী ভাইদেরও করতে দেখেছি যে “ইমু সেক্স করতে চাই, আমার নাম্বার ব্লা ব্লা ব্লা”।

নতুন আপডেটে আরো আসছে যে, কোন কনটেন্ট তৈরীর সম্পূর্ণ দায়ভার তার ক্রিয়েটরের। এবং সেই কনটেন্ট ইউটিউব চাইলে কোন কারণ ছাড়াই ইউটিউবে না রাখার ক্ষমতাও কর্তৃপক্ষের আছে। মানে হচ্ছে ঝুট-ঝামেলা হবে বলে মনে হলে টুপ করে কোন কারণ ছাড়াই যে কোন ভিডিও ইউটিউব তার প্লাটফরম থেকে সরিয়ে দিতে পারবে এবং কোন প্রকার মামলা-মোকদ্দমা হলে ইউটিউব তার সাথে জড়াবেনা।

ইউটিউব ইতোমধ্যেই এই জুন থেকে কিছু নতুন বিষয় নিয়ে এসেছে এবং সেই মোতাবেক কাজও করেছে। যে কিছু চ্যানেল রিমুভ করা হয়েছে কারণ সেগুলো নাৎসীবাদ, বর্ণবাদ, ষড়যন্ত্র তত্ব সংক্রান্ত সংবাদ যারা প্রচার করেছে এবং যার পেছনে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নিদির্ষ্ট কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ডকু বানাতে গেলে নাৎসীবাদ আসবেই তাই বলে সেই চ্যানেল টার্মিনেটেড হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি অসৎ কোন উদ্দেশ্যে হয়)।

ইউটিউবের এ ধরণের ঘটনার ক্ষেত্রে টার্মিনেশনের পদ্ধতি হচ্ছে যে চ্যানেল বন্ধ করা হলে তারা মোটামুটি স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেবে যে কেন চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হলো। সেক্ষেত্রে চ্যানেল মালিককে তার ভিডিওগুলো ডাউনলোড করে নেয়ার মতো সুযোগ দেয়া হবে। ব্যানড ইউজাররা ভিডিও দেখতে পারবে, কিন্তু কমেন্ট ও আপলোড করতে পারবেনা।

শেষ কথা হচ্ছে যে “মনিটাইজেশন না থাকলে চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হবে” কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব বরং বলা হয়েছে যে চ্যানেলগুলো কারণে ইউটিউব আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে বলে মনে হয় সেই চ্যানেলগুলোর কিছু ক্ষমতা সীমিত করে দেয়া হতে পারে বা পুরোপুরি টার্মিনেটও করা হতে পারে।

খুব অবাক হওয়া বিষয় হচ্ছে যে কিছু নামকরা টেক ম্যাগ বর্তমান আপডেটের একটি লাইনের ভুল বা নিজেদের মনমতো মনগড়া ব্যাখ্যা করে পুরো ইউটিউব ক্রিয়েটর কমিউনিটিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এরই মধ্যে ভারতের এক ষ্টুপিড ইউটিউবারও এই কথাগুলো পুরোপুরি না শুনে বা না বুঝে অযথাই একটা গুজব ছড়িয়ে দেয় এই সেই গুজবে পাল তুলে দেয় টেকশহর নামে বাংলা একটি পেজ। আবার মুল ধারার একটি গণমাধ্যমও কোন বাছ-বিচার না করেই গুজবকে একেবারেই বাস্তবে নিয়ে আসে। ইন্ডিয়ান ইউটিউবারের মনগড়া ব্যাখ্যা শুনে মন চাইছিলো গিয়া পিটায়া আসি।

আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে সাধারণ ক্রিয়েটরদের চিন্তার বিশেষ কোন কারণ নেই। তবে “ষড়যন্ত্র তত্ব” কথাটির ব্যাপকতা অনেক বেশী। তাই যারা হঠাৎ করে চমকে দেয়ার মতো খবর বানান, যেমন মায়াজাল, অদ্ভুত ১০, ফানিফ্রগ এদের আরো বেশী সাবধান হতে হবে। আপনার চ্যানেল থেকে কোথাও কমেন্ট করার সময় কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে যাবেননা বা অহেতুক কোন নাম্বার লিখবেন না, কোন অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ বা ঝগড়ায় জড়াবেন না। মনচাইলেই আপনার ইউটিউব একাউন্ট থেকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মা-বোনকে **** দিবেন টাইপের কমেন্ট আপনার চ্যানেলের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। কোনপ্রকার বর্ণবাদী বিষয়ে মন্তব্য করা বা ভিডিও বানানো থেকে দুরে থাকুন।

যতটুকু বুঝেছি ইউটিউব সঠিক পথেই আছে। ভদ্র-সাধারণ ক্রিয়েটরদের এতো চিন্তার কিছু নেই।

ইউটিউবের অফিশিয়াল টুইটের লিংক এখানে https://twitter.com/TeamYouTube/status/1193975620755001344

পিসিম্যাগ এর অফিশিয়াল লিংক: https://www.pcmag.com/news/371901/youtube-accounts-can-be-deleted-if-no-longer-commercially

লেখাটি লিখতে যথেষ্ঠ শ্রম দিতে হয়েছে। কপি করতে চাইলে ক্রেডিট দিতে পারেন, না দিলেও আমি কিইবা করতে পারবো। এছাড়া অনেক বড় লেখায় ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে, বাংলা-ইংরেজীর মিশ্রণ থাকতে পারে। নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন। কারো কোন গঠনমুলক মন্তব্য থাকলে স্বাগতম। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে হওয়ায় পোষ্টটি কয়েকদিন এনাউন্সমেন্ট বিভাগে থাকবে

হ্যাপি ইউটিউবিং

No comments

Theme images by richcano. Powered by Blogger.